মৃত্যুতে ক্ষুধা মিটে
প্রতিক্ষণ ডটকম:
বিশাল এই উদ্ভিদ জগত। এর ব্যাপ্তি পুরো পৃথিবী জুড়ে! কি বিপুল তার বৈচিত্র! কি অপার এর রহস্য! রঙ, রূপে, রসে, সৌরভে, বৈচিত্রে আর রহস্যে উদ্ভিদ জগত সাজিয়ে রেখেছে আমাদের প্রিয় গ্রহটিকে। মিটিয়েছে আমাদের প্রয়োজন। আর সেইসাথে খুলে বসেছে নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের ডালি।
কিন্তু তারই মাঝে হাজারো রকমের অসংখ্য পতঙ্গের ঘুরাঘুরি। এমনি একটি পতঙ্গ উড়ে বেড়াচ্ছিল একটি উদ্ভিদের উপর দিয়ে। হঠাৎ একটা মিষ্টি গন্ধের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পতঙ্গটি একটি উদ্ভিদের পাতার উপর গিয়ে বসলো। আর ঠিক তখনই উদ্ভিদের পাতাটি বন্ধ হয়ে গেল। ভেতরে আটকা পড়লো সেই জীবন্ত পতঙ্গ। এক সময় সেখানেই পতঙ্গটি মৃত্যুবরণ করলো। কয়েকদিন পর সেখানে পতঙ্গটির শক্ত আবরণ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট রইলো না…
এই উদ্ভিদগুলোকে বলা হয়ে থাকে মাংসাশী উদ্ভিদ। পৃথিবীতে প্রায় ৪৫০ প্রজাতির মাংসাশী উদ্ভিদ রয়েছে। এসব উদ্ভিদ শিকার করে নিজের পুষ্টির চাহিদা মেটায়। খাবার হিসেবে এরা মাছি, ছোট কীটপতঙ্গ, মাকড়সা, ব্যাঙ, গিরগিটি ইত্যাদি ভক্ষণ করে। বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ শিকারকে আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকে। কোন প্রজাতির উদ্ভিদ শিকারকে আকৃষ্ট করার জন্য এক ধরনের মিষ্টি গন্ধ উৎপন্ন করে। এই মিষ্টি গন্ধের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে অনেক কীটপতঙ্গ শিকারে পরিণত হয়। আবার কোন কোন প্রজাতির উদ্ভিদ শিকারকে আকৃষ্ট করার জন্য উৎকট দুর্গন্ধ ছড়ায়।
আধ সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে পাতা বন্ধ করে ফেলতে পারে এ উদ্ভিদ গুলো। ঠিক এই সময় আবার পাতার কাটাগুলো পোকাকে বাইরে বের হতে বাধা দেয়। ফলে পাতার মাঝখানে পোকা আটকা পড়ে। পাতা থেকে বিশেষ এক রস বের হয়ে পোকাকে হজম করতে শুরু করে। এভাবে একটা পোকা হজম করতে ১০ দিনের মতো সময় লাগে।
উদ্ভিদ চলাফেরা করতে পারেনা আর তাই মাংসাশী উদ্ভিদকে তাদের শিকারকে আকৃষ্ট করে নিজের দিকে নিয়ে আসতে হয়। শিকার ধরার জন্য এরা ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ। ফাঁদ পেতে উদ্ভিদগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। যদি কোন শিকার ভুল করে সেই ফাঁদে পা দেয় তাহলে সে আর মুক্ত হতে পারেনা। সে পরিণত হয় মাংসাশী উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদানে ।
শুধুমাত্র জীবন বাঁচানোর তাগিদে উদ্ভিদগুলোকে মাংসাশী হয়ে উঠতে হয়েছে। উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল নাইট্রোজেন। মাংসাশী উদ্ভিদগুলো জন্মে ভেজা ও স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে। সেসব স্থানের মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ খুবই কম। যে উদ্ভিদগুলো মূলের সাহায্যে নাইট্রোজেন গ্রহণ করে তারা এই পরিবেশে বাঁচতে থাকতে পারে না। শুধুমাত্র মাংসাশী উদ্ভিদগুলোই এই পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে। আর বেঁচে থাকার জন্য যে নাইট্রোজেন প্রয়োজন তা তারা গ্রহণ করে শিকারকৃত মৃতদেহ থেকে।
নিজের জীবন বাঁচাতে শিকারকে আকৃষ্ট করার মত সব উপাদানই আছে এদের।
আর সুকৌশলে এ কাজটি করে সুন্দর পৃথিবীর বুকে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নিত্য সংগ্রাম চলে।
প্রতিক্ষণ/এডি/মাসুদ